কক্সবাজার, মঙ্গলবার, ৭ মে ২০২৪

দেশের প্রথম উন্মুক্ত কারাগার হচ্ছে উখিয়ায়, বন্দিরা পাবেন এক সপ্তাহের ছুটি

উন্নত বিশ্বের আদলে কক্সবাজারের উখিয়ার হলদিয়া পালং এর পাগলির বিল নামক স্থানে হচ্ছে দেশের প্রথম উম্মুক্ত কারাগার। জেলা কারাগারের উপর চাপ কমাতে বর্তমান সরকারের এই যুগান্তকারী পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছেন কক্সবাজার সিভিল সোসাইটি ও জনপ্রতিনিধিরা।

জেলা কারা কর্তৃপক্ষের তত্বাবধানে নির্মিত এ কারাগার ১৬০ একর জমির উপর থাকবে একাধিক বহুতল ভবন। প্রথম ধাপে কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে চলছে সীমানা চিহ্নিতকরণের কাজ। আগামি তিন বছের মধ্যে উন্মুক্ত কারাগারের পরিপূর্ণ কাজ সমাপ্ত হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।

এখানে থাকবে দৃষ্টিনন্দন ফুলে ফলে সজ্জিত বাগান, কুটিরশিল্প, ক্ষেত খামার, খেলাধুলা, পড়ালেখাসহ জীবন ঘনিষ্ঠ নানা কার্যক্রম। বন্দিরা থাকবেন না শৃঙ্খলে। প্রয়োজনে এক সপ্তাহের ছুটি নিয়ে পরিবার পরিজনের সঙ্গে আনন্দ উপভোগ করে আবার ফিরতে পারবেন কারাগারে। উন্মুক্ত কারাগারে ক্ষেত খামার ও কুটির শিল্পে কাজ করার উপর বন্দিরা পাবেন পারিশ্রমিক। যা দিয়ে বন্দিরা পরিবার পরিজনের ভরণ পোষণ মেটাত সক্ষম হবেন। এসব তথ্য জানিয়েছেন কক্সবাজারের জেল সুপার মোহাম্মদ শাহ আলম খাঁন।

জানা গেছে, কক্সবাজার জেলা কারাগারে রয়েছে ৮৫০ জনের ধারণ ক্ষমতা। সেখানে বর্তমানে হাজতি কয়েদির সংখ্যা হচ্ছে প্রায় সাড়ে চার হাজার। এতে রোহিঙ্গা রয়েছে ১ হাজার ১৬৬ জন। আর মিয়ানমারের নাগরিক আছে ১৩৪ জন। কারারক্ষী ১০১ জন, সহকারী অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রধান কারারক্ষী ১০ জন, প্রধান কারারক্ষী ৩, সুবেদার ২, ডেপুটি জেলার একজন, নারী কারারক্ষী ১০, ডাক্তার ২, ফার্মাসিস্ট এক ও জেল সুপার আছেন একজন।

জেলার মো. মোস্তফা কামাল জানান, ধারণ ক্ষমতার পাঁচগুণের বেশি কয়েদিদের সামলাতে আমরা হিমশিম খাচ্ছি। তাই উন্মুক্ত কারাগার নির্মিত হলে চাপ কমবে বহুলাংশে। শুধু তাই নয়, বন্দিরা পাবেন কাঙ্ক্ষিত সেবা।

ডেপুটি জেলার মনির হোসেন বলেন, জেলা কারগারে সেবার মান অতীতের চেয়ে এখন অনেক ভালো। তারপরও উন্মুক্ত কারাগার হবে বন্দিদের জন্য অন্যতম সংশোধানাগার।

সম্প্রতি কারগার থেকে ৫ বছর অস্ত্র মামলায় সাজা ভোগের পর বেরিয়ে আসা মহেশখালীর মিজানুর রহমান বলেন, প্রথমে দুই বছর অনেক কষ্ট পেয়েছি। খাবার মান, থাকার জায়গার সমস্যা ছিল। এরপর পরিস্থিতি বদলাতে শুরু করে। বিশেষ করে নতুন ভবন হওয়ার পর থাকার তেমন কোন সমস্যা হয়নি। খাবার তালিকায় আগে ছিল সকালে গুড়-রুটি আর এখন ডাল-রুটি বা রুটি হালুয়া।
টেকনাফের নুর হোসেন একটি হত্যা মামলা থেকে ৬ মাস পর জামিনে বের হয়ে আসেন গত ২৫ আগস্ট। তিনি বলেন, জেলে আমি আগেও ছিলাম। এখন জেলে থেকে হাজতি কয়েদিরা যে সুবিধা ভোগ করছেন তা আগে কখনো পায়নি। এখন সপ্তাহে একদিন আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে দেখা সাক্ষাতের পাশাপাশি প্রতিমিনিট এক টাকায় সর্বোচ্চ ১০ মিনিট মোবাইলে কথা বলার সুযোগ পাচ্ছেন। তা ছাড়া চিকিৎসা সেবা অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে উন্নত। কারা কর্তৃপক্ষ অনেক মানবিক আচরণ করে। ফলে সব মিলিয়ে জেলখানার পরিবেশ পরিস্থিতি মোটামুটি ভালো। এর বাইরে কারা পরিদর্শকরা মাঝেমধ্যে কারাগারের ভেতরকার অবস্থা পর্যবেক্ষণ করছেন। খোঁজ-খবর নিচ্ছেন বন্দিদের।

কক্সবাজার সিভিল সোসাইটির সভাপতি আবু মোর্শেদ চৌধুরী বললেন উন্মুক্ত কারাগার তৈরি হলে বন্দিরা পাবেন আরো পরিচ্ছন্ন পরিবেশের ছোঁয়া ও আত্মা শুদ্ধিকরণের সুযোগ।

কক্সবাজার সদর-রামু আসনের এমপি সাইমুম সরওয়ার কমল বলেন, কক্সবাজারবাসীর জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহার হচ্ছে এই উন্মুক্ত কারাগার। এখানে সব বয়সী মানুষ বা কারাবন্দি উন্মুক্ত কারাগারে ঠাঁই পাবেন। তবে বৃদ্ধ, শিশু ও সাজা ভোগের শেষ প্রান্তে আসা বন্দিরা অগ্রাধিকার পাবেন এখানে।

পাঠকের মতামত: